সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মেরাজের মিষ্টি বাড়ি

মেহেরপুর সরকারি কলেজের ছাত্র এস. এম. আল-মেরাজ। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে মেরাজ ফেসবুকের মাধ্যমে মিষ্টি বিক্রি করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে ভার্চুয়াল বিশ্বে। শুধু রাজধানীতে নয়, দেশজুড়ে অনলাইনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান মেরাজ। কিশোর মেরাজের গল্প জানাচ্ছেন আরিফুল ইসলাম আরমান

শুরুর গল্প
২০১৩ সালের দিকে ফেসবুকের মাধ্যমে নিজ এলাকার (রাজশাহীর) আম বিক্রি করতে দেখে এধরনের ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হন মেরাজ। তিনি বলেন, এক ফেসবুক পেইজে দেখলাম রাজশাহীর আম বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর আমিও বেশ কিছুদিন ভেবে দেখলাম, ওই ভাই যদি ফেসবুকের মাধ্যমে তার নিজ জেলার পণ্য দিয়ে রাজশাহীকে সকলের মাঝে তুলে ধরতে পারেন তাহলে আমি কেনো পারবো না আমার জেলা মেহেরপুরের ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সাবিত্রী ও রস কদম মিষ্টান্ন দিয়ে মেহেরপুরকে সকলের মাঝে তুলে ধরতে?

এরপর ২০১৪ সালের জুলাই মাসে মেহেরপুরের মিষ্টি শিরোনামে একটি ফেসবুক ফ্যানপেইজ খোলেন মেরাজ। এই পেইজে আপলোড করেন মেহেরপুর জেলার ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাসুদেবের সাবিত্রী ও রস কদম মিষ্টির ছবি এবং ইতিহাস। সাথে মিষ্টির মূল্য ও প্রয়োজনীয় কিছু নির্দেশনা।

একসময় ফেসবুক ও মোবাইলের মাধ্যমে মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রাম ও জায়গা থেকে মিষ্টির অর্ডার আসা শুরু করে। শুরু হয় উদ্যোক্তা মেরাজের পথচলা।

বন্ধুদের সহযোগিতায় বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন মেরাজ। হঠাৎ এক বন্ধু অর্ডারের বেশ কিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় কিছুদিন বন্ধ ছিলো তার এই উদ্যোগ।

পথচলা
অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তিনি থেমে যাননি। নিজ জেলার ফ্রিল্যান্সার ও ইউনিক সফট বিডি’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত (হিরোক) এর প্রেরণা আবার শুরু করেন কাজ।

মেহেরপুরের মিষ্টি নাম পরিবর্তন হয়। নতুন নাম মিষ্টি বাড়ি। এই উদ্যোগে সহযোগিতা করেন মুনিয়া রহমান, ইয়াজদানি উল্লাস, রিপন হাসান, তানভির, শুভ, সাঈদ, রাশিক ও জেলার কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার। উৎসাহ ও পরামর্শ পান ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ চাকরি খুজবো না চাকরি দিবো ও উদ্যোক্তা হও গ্রুপ থেকে। এরপর আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি। অতীত ভুলে পুরোদমে কাজ শুরু করেন মিষ্টি বাড়ি নিয়ে।



চলছে যেমন
মেরাজ চেয়েছিলেন, শুধু মেহেরপুর জেলার মিষ্টি নিয়েই ব্যবসা করবেন। কিন্তু মিষ্টির প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী, বিখ্যাত ও স্বনামধন্য মিষ্টিগুলোকে নিয়ে এসেছেন মিষ্টি বাড়িতে।

বর্তমানে তার মিষ্টি বাড়িতে কুমিল্লার বিখ্যাত মনোহারপুরের মাতৃভাণ্ডারের রস মালাই, বগুড়ার বিখ্যাত দই, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার মন্ডা, মেহেরপুর জেলার ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সাবিত্রী ও রস কদম মিষ্টি, যশোর জামতলার রসগোল্লা (সাদেক গোল্লা), সাতক্ষীরা জেলার বিখ্যাত পোড়া সন্দেশ, টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচম, নাটোর জেলার ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লা, বিবাড়িয়ার বিখ্যাত ছানামুখি ও ফরিদপুর জেলার বাগাট রাজকুমারের স্বনামধন্য প্রায় চব্বিশ রকমের মিষ্টান্ন, বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কিছু মিষ্টান্ন। এছাড়াও তার মিষ্টি বাড়ির স্পেশাল তালশাস, কাটারিভোগ, সাবানীভোগ, ইলশেপেটি, কদমি, চমচম ও কালোজাম তো রয়েছেই।

তবে মেরাজ চেষ্টা করছেন দেশের ৬৪ জেলার বিখ্যাত, ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য মিষ্টান্নগুলোকে মিষ্টি বাড়িতে যুক্ত করতে। এফ-কমার্স থেকে ই-কমার্সে। তৈরি করলেন www.mistibari.com

এই ওয়েবসাইট বা মিষ্টি বাড়ির ফেসবুক পেইজ থেকে নিয়ম অনুযায়ী অর্ডার করলে নির্ধারিত সময়ে মধ্যেই গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে পছন্দের মিষ্টি। ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ পদ্ধতিতে মিষ্টি বুঝে পেয়ে পরিশোধ করতে হবে দাম। এজন্য দেশের ১৭ জেলার ৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছে মিষ্টি বাড়ি। আর এসব জেলায় রয়েছে মিষ্টি বাড়ির নিজস্ব প্রতিনিধি। 

প্রচারণার মাধ্যম ফেসবুক
ব্যবসা যেহেতু অনলাইনে তাই ফেসবুককেই প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন মেরাজ। 

ভবিষ্যত পরিকল্পনা
মিষ্টি বাড়ির সার্ভিস বর্তমানে এখন শুধুই ঢাকাকেন্দ্রিক। মেরাজের প্রত্যাশা ঢাকাতে অফলাইনেও কাজ শুরু করা। পাশাপাশি তিনি এই ব্যবসা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চান। মিষ্টি বাড়ির সঙ্গে যুক্ত করতে চান নতুন নতুন বেকার তরুণ-তরুণীদের।

নতুনদের জন্য
মেরাজ মনে করেন, যেকোনো ব্যবসায় ধৈর্য আবশ্যক। হোক তা অনলাইন বা অফলাইনে। অনেকেই মনে করে অনলাইন ব্যবসা সহজ। কিন্তু অনলাইন, অফলাইন ব্যবসা একই, অনলাইনে শুধু মার্কেটিং করা একটু সহজ। তাই রিসার্চ না করে হঠাৎ করেই ব্যবসা শুরু করা উচিৎ নয়। ব্যবসা একদিনে প্রতিষ্ঠিত হয় না, অনেক ধৈর্য ধরতে হয়। তথ্য সূত্রঃ জাগো নিউজ ২৪


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

খুলনায় সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে ধারণা দেয়ার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

খুলনা বিভাগীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে ধারণা দেয়ার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুস সামাদ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বেকার সমস্যা দূর করা ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং অন্যতম একটি মাধ্যম। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ফ্রিল্যাংন্সিং একটি সম্ভাবনাময় খাত। বিভাগীয় কমিশনার অংশগ্রহণকারীদের সম্ভাবনাময় এ খাতে নিজস্ব মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের অভিযাত্রায় সামিল হবার আহবান জানান। কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ ফারুক হোসেন এবং খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল। কর্মশালায় ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে বিস্তারিত ধারনা উপস্থাপন করেন সফল ফ্রিল্যান্সার ও ইউনিক সফট বিডি’র সিইও মুন্সি জাহাঙ্গীর জিন্নাত হিরোক। কর্মশালায় খুলনা বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।  অননিউজ.কম

মিষ্টিবাড়ির শুরু ১ কেজি মিষ্টির দাম দিয়ে

প্রযুক্তির এই যুগে ই-কমার্সের মাধ্যমে অনেকেই এখন অনলাইনে কেনাবেচা করছে। অনলাইনে কেনাবেচা এখন শুধু শহর অঞ্চলে সীমাবন্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামান্তরে। এখন অনলাইনে সকল পণ্য মিললেও কিছু কিছু পণ্য অনলাইনে পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য, তেমনি একটি পণ্য হলো মিষ্টি। এই কষ্টসাধ্য ব্যাপারটিকে সহজ করেছে দেশের বিভিন্ন জেলার মিষ্টি অনলাইনে বিক্রি করে মিষ্টিবাড়ি।  নিজের প্রতিষ্ঠানকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায় মিষ্টিবাড়ির প্রধান নিবার্হী এস এম আল-মেরাজ। মিষ্টিবাড়ির শুরু, পরিকল্পনা, সফলতা ইত্যাদি প্রভৃতি উঠে এসেছে ব্রেকিংনিউজের প্রতিবেদক অঞ্জন চন্দ্র দেবের নেয়া সাক্ষাৎকারে:  ব্রেকিংনিউজ: আপনার সর্ম্পকে সংক্ষপে বলুন। মেরাজ: আমার গ্রামের বাড়ি মেহেরপুর জেলার আমঝুপি গ্রামে। আমার বেড়ে উঠা গ্রামের বাড়িতে। মানবিক নিয়ে পড়াশোনা করছি মেহেরপুর সরকারি কলেজে এবারে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ইন্টারে উঠার পর থেকেই নিজে নিজে কিছু করার চেষ্টা সব সময় কাজ করতো। চেষ্টা করতাম নতুন কোন আইডিয়া নিয়ে কাজ করার। সে চেষ্টা থেকেই মিষ্টিবাড়ি নিয়ে যাত্রা শুরু ২০১৪ সালে। ব্রেকিংনিউজ: মিষ্টিবাড়ির শুরুটা সর্ম্পকে বলুন? মেরাজ: প্

মেহেরপুরে শেষ হয়েছে তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা

মেহেরপুরে শেষ হয়েছে তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনি মেলা। আজ শনিবার বিকেলে মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাপনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসাক (সার্বিক) মাজেদুর রহমান খান। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর মেয়র মোতাছিম বিল্লাহ মতু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আশকার আলী, সহ-সভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, জেলা মহিলালীগের সভাপতি শামীময়ারা হিরা। পরে জেলায় তথ্য প্রযুক্তিতে অবদান রাখায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসকে পুরষ্কৃত করা হয়। তথ্য প্রযুক্তিতিতে সেরা উদ্ভাবক ইউনিক সফট বিডির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত হিরক এবং সামসুজ্জোহাকে পুরষ্কৃত করা হয়। এছাড়াও তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনি মেলার সেরা ষ্টল ইউনিক সফট বিডি, ২য় স্থান অধিকারকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও তৃতীয় স্থান অধিকারী মেহেরপুর কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকললজির উদ্যোক্তাদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এর আগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন মেহেরপুরে